Benefits of Eating Chia Seeds: চিয়া সীড এর উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম
চিয়া সিড ক্ষুদ্র কালো একপ্রকার শস্য দানা যা ”সালভিয়া হিস্পানিকা”- এক প্রকারের মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ বীজ যার উৎপত্তিস্হল মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ মেক্সিকো-তে।চিয়া বীজ প্রাচীন ”আজটেক” এবং ”মায়ান” জাতিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ছিল। তারা বিশ্বাস করতো এই বীজ প্রচুর শক্তির উৎস।আধুনিক বিজ্ঞান এবং বিভিন্ন গবেষণায় ও এটি প্রমাণিত যে চিয়া সীড একটি মাল্টি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যা প্রতিদিন গ্রহণ করলে অনেক ধরণের উপকারিতা পাওয়া যাবে।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীড এ রয়েছে ৪৮৬ কিলো ক্যালোরি যার মধ্যে ৪২,১গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ,৩৪,৪ গ্রাম ডায়াটারি ফাইবার , ৩০,৭ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৬,৫ গ্রাম প্রোটিন। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১ , বি২ , বি৩ ,বি ৯, ভিটামিন সি এবং ই। মিনারেলস এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম , আয়রন ,ম্যাগনেসিয়াম , মেঙ্গানিজ , ফসফরাস, পটাসিয়াম ও জিঙ্ক।
চলুন জেনে নেয়া যাক প্রচুর পুষ্টিগুন্ সমৃদ্ধ এই চিয়া সীড এর উপকারিতা ও খাবার নিয়ম সম্পর্কে।
১। প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট : চিয়া বীজ এ রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ কোষ ও ত্বকের রক্ষনাবেক্ষন করে থাকে। এন্টি অক্সিডেন্ট আপনার মুখে বয়সের ছাপ রোধ করবে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় এটাও প্রমাণিত যে এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে লড়াই করে।চুল ও ত্বক চকচকে ও প্রাণবন্ত রাখতেও এর জুড়ি নেই। তাই দেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘাটতি মেটাতে চিয়া বীজ হতে পারে খুব ভালো একটি সমাধান।
২। হৃদ-রোগের ঝুঁকি কমায়: চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সক্ষম।ইঁদুরের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ ট্রাইগ্লিসারাইড, প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং পেটের চর্বি সহ কিছু ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করতে পারে এবং ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরলও বাড়িয়ে তুলতে পারে।এছাড়াও কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ উচ্চ রক্তচাপের মানুষের রক্তচাপকে
উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। তাই হার্ট এর সুস্থতায় চিয়া সীড হতে পারে আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী।
৩। উচ্চমানের প্রোটিন : চিয়া সীড এ যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে।ওজন অনুসারে প্রায় 14% প্রোটিন থাকে চিয়া বীজে যা বেশিরভাগ উদ্ভিদের তুলনায় অনেক বেশি। যারা ভেজিটেরিয়ান তাদের জন্য খুব ভালো একটি প্রোটিন এর উৎস এটি। এছাড়াও পরিপূরক খাদ্য হিসেবেও এটি প্রোটিন এর ঘাটতি মেটাতে পারবে।
৪। হাঁড়ের সুরক্ষায় : চিয়া বীজে হাড়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিন।এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম এর পরিমান চোখে পড়ার মতো। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।যারা দুধ বা দুগ্ধ জাত খাবার খেতে পারেন না তাদের জন্য খুব ভালো একটি ক্যালসিয়াম এর উৎস চিয়া সীড।
৫। ওজন কমাতে : মূলত ওজন কমাতে চিয়া বীজের ভালোই খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
চিয়া সীড এ বিদ্যমান উচ্চ প্রোটিন ক্ষুধা কমায়। তাই ওজন কমাতে এটির সরাসরি কোনো হাত না থাকলেও এটি ওজন কমাতে সাহায্যকারী বটে। তবে অনেকেই চিয়া সীড লেবুর সাথে সেবন করে থাকেন ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে
পাওয়া যায় নি। তবে যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক তারা সেবন করতে পারেন অনায়েসে কারণ এটি বার বার ক্ষুধা লাগার হাত থেকে রক্ষা করবে আপনাকে এবং শরীরে শক্তিও যোগাবে।
৬। ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড : চিয়া সীড এ খুব ভালো পরিমান ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছেপরিমানে যা সামুদ্রিক মাছ স্যামন এর থেকেও বেশি।তবে চিয়া সীডস থেকে প্রাপ্ত ওমেগা-৩ অতটাও উন্নত নয় যতটা আসলে ভাবা হয় কারণ চিয়া বীজ ALA সরবরাহ করে যা দুর্ভাগ্যবশত মানবদেহ সক্রিয়রূপে রূপান্তর করতে অক্ষম।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ফ্যাট হচ্ছে DHA যা চিয়া সীড সরবরাহ করতে পারে না।
৭ । হজম শক্তি বাড়ায় : চিয়া সীড এ রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা মলাশয় পরিষ্কার রাখে। নিয়মিত সেবনে এটি পেট পরিষ্কার রাখবে কোষ্টকাঠিন্য দূর হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম : স্থান ভেদে চিয়া বীজ খাবার নিয়ম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিভিন্ন
ফলের রস এর সাথে বা পানিতে মিশিয়ে সাধারণত চিয়া সীড খাওয়া হয়ে থাকে। স্বাদ ও ঘ্রাণহীন হয়ে থাকে বলে
অনেক দেশে রুটি বা বিস্কুট এর সাথেও এটি সেবন করা হয়ে থাকে। তবে ১ গ্লাস পানি-তে ১ চা চামচ পরিমান
নিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে খেলে ভালো উপকার মেলে।